প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক। তো নিউট্রন স্টার বা নিউট্রন তারা কাকে বলে?
– যে তারা নিউট্রন দিয়ে তৈরি, তাকে নিউট্রন তারা বলে
উত্তর ঠিক আছে। কিন্তু কেউ যদি একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে বলে, তাহলে তো নিউট্রন তারা বা নিউট্রন স্টার সম্পর্কে না জানলে বলতে পারবেন না। কী, কেন, কীভাবে প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। চলুন তাহলে আলোচনা করা যাকে নিউট্রন তারা নিয়ে।
নিউট্রন তারা
নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে নক্ষত্রে যখন শেষ পর্যন্ত আয়রন সৃষ্টি হবে, তখন আয়রনের পরমাণুগুলো মিলে মিলে একটা আয়রনের গোলক সৃষ্টি করে; যা নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে না। কারণ আয়রনের নিউক্লিয়াস সবচেয়ে স্থায়ী। অর্থাৎ, বহির্মুখী চাপ সৃষ্টি করবে না। ফলে মহাকর্ষ বলের কারণে এই গোলক সংকুচিত হতে শুরু করবে।
আয়রনের এই সংকুচিত গোলককে দাঁড় করিয়ে রাখবে এক বিশেষ ধরনের চাপ যাকে বলে ইলেকট্রন ডিজেনারেসি প্রেসার বা ফার্মি প্রেসার।
প্রতিটি আয়রনের নিউক্লিয়াসের সাথে কিছু ইলেকট্রন যুক্ত থাকে। এই ইলেকট্রনরা ফার্মিয়ন জাতের কণা। ফার্মিয়নরা একটু চঞ্চল। তারা স্থিরভাবে এক জায়গায় বসে থাকতে পারে না। অর্থাৎ, এক অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে না। ফলে খুব বেশি কাছাকাছি চলে এলে এদের মধ্যে একটা চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপটাকেই বলে ফার্মি প্রেসার; যা নক্ষত্রের ভিতর ওই আয়রনের গোলকটাকে টিকিয়ে রাখে।

ছবি: NASA/F. Walter
কিন্তু সবসময় ফার্মি প্রেসার আয়রনের গোলককে টিকিয়ে রাখতে পারে না। কারণ নক্ষত্রের ভেতরের আয়রনের গোলকের ভর যখন বাড়তে বাড়তে একটি নির্দিষ্ট ভরকে অতিক্রম করে, তখন তাকে ফার্মি প্রেসার দিয়ে আর টিকিয়ে রাখা যায় না। যে ভরের সীমা পর্যন্ত ফার্মি প্রেসার আয়রনের গোলককে টিকিয়ে রাখতে পারে, তাকে চন্দ্রশেখর লিমিট বলে। চন্দ্রশেখর লিমিট সূর্যের ভরের প্রায় ১.৪ গুণ ভর। অর্থাৎ সেই আয়রনের গোলক যদি সূর্যের ভরের ১.৪ গুণ বেশি হয় তাহলে ফার্মি প্রেসার সেই আয়রন বলকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। তখন গোলকটি সংকৃচিত হতে হতে নিউট্রনের তৈরি বলে পরিণত হবে।
এখন যদি আয়রনের গোলকটি সংকুচিত হতে হতে নিউট্রনের তৈরি বলে পরিণত হয় তাহলে ইলেকট্রন আর প্রোটন কোথায় গেল?
উত্তরটি হলো – খুব বেশি ঘনত্বের কারণে আয়রনের নিউক্লিয়াসগুলো ইলেকট্রনদের খুব কাছে পেয়ে যাবে। আর তাদের খেয়ে নেওয়া শুরু করবে। একে বলে K-ক্যাপচার প্রসেস। পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনগুলো তো K, L, M এইসব কক্ষপথে নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুরছে, K-টা সবচেয়ে কাছে। K-ক্যাপচার পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াস K কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলোকে খেয়ে নেয়। তো সেই K-ক্যাপচারের মতোই একটা পদ্ধতিতে আয়রনের নিউক্লিয়াসগুলো ইলেকট্রনগুলোকে খেতে শুরু করে। নিউক্লিয়াসের ভেতরে যে প্রোটন আছে, তারা খেয়ে নেয়া ইলেকট্রনের সাথে মিলে নিউট্রনে পরিণত হয়।

ছবি: Rafael Jean-Luc Alexandre/Daniel Molybdenum/NASA’র Goddard Space Flight Center
এই পরিবর্তনটা ইলেকট্রো-উইক ফোর্সের মাধ্যমে হয়। তবে এটা এমনি এমনি হয় না। কোনো কিছু পেতে হলে যেমন কোনো কিছু দিতে হয়, ঠিক তেমনই নিউক্লিয়াসকে কিছু দিতে হবে। সেটা হলো একটা নিউট্রিনো। এই নিউক্লিয়াসগুলো থেকে সেই নিউট্রিনোগুলো বেরোতে থাকে। এইভাবে একটা নিউট্রনের গোলক তৈরি হয়। তো নক্ষত্রের কেন্দ্র এখন নিউট্রন স্টার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার আসি মূল কথায় —
মানুষ যেমন মৃত্যুর আগে তার উত্তরসূরি রেখে যায়, ঠিক তেমনই যখন সুপারনোভার মাধ্যমে নক্ষত্রের জীবনের সমাপ্তি ঘটে, তখন সেও তার উত্তরসূরি রেখে যায়। তার এই উত্তরসূরির নাম নিউট্রন তারা বা নিউট্রন স্টার।
অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, নক্ষত্রটি সংকুচিত হতে হতে এর ব্যাস ২০ কিলোমিটার হলেও এর ভর সূর্যের চেয়ে ১.৪ গুণের থেকেও বেশি! খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে নক্ষত্রটির ঘনত্ব কী পরিমাণ বেশি! এই বিষয়টাকে বোঝার সুবিধার্থে তুলনা করা যাক। মনে করুন, হিমালয় পর্বতের যে ভর সেটা একটি চিনির স্ফটিকের মধ্যে রয়েছে!
কীভাবে এত ছোটো জায়গায় এই বিশাল পরিমাণ ভর থাকে?
এখন চলুন, বিষয়টাকে আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করি।
কীভাবে এত ছোটো জায়গায় এই বিশাল পরিমাণ ভর থাকে?
দেখুন, একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যেই এর মূল ভর থাকে। আমরা চারপাশে যেসব জিনিস দেখি, তার আকার কিন্তু নিউক্লিয়াসের আয়তন নয়, পরমাণুর আয়তন। আর একটি নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ থেকে পরমাণুর ব্যাসার্ধ প্রায় ১ লক্ষ গুণ বড়ো। বোঝাই যাচ্ছে যে পরমাণুর বেশিরভাগ জায়গাই ফাঁকা।

ছবি: Feryal Özel
নিউট্রন তারার এক্ষেত্রে বিষয়টা কিন্তু এরকম নয়। এটা কিন্তু পরমাণু দিয়ে তৈরি নয়। নিউট্রন স্টারের সব জায়গাতেই কিছু না কিছু নিউট্রন আছে। অর্থাৎ, এর বেশিরভাগ জায়গাই নিউট্রন দিয়ে পূর্ণ। এর মানে সহজ ভাষায়, পরমাণুর ফাঁকা স্থানের যে আয়তন সেটি কিন্তু নিউট্রন স্টারে নেই। এজন্যই এত কম জায়গায় এত বেশি ভর রয়েছে।
এবার নিউট্রন স্টারের গ্র্যাভিটি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক। যেহেতু এর ঘনত্ব অনেক অনেক বেশি, তাই এর গ্র্যাভিটিও অনেক বেশি। নিউট্রন স্টারের গ্র্যাভিটি পৃথিবীর চেয়ে ২×১০১১ গুণ বেশি শক্তিশালী। আপনি যদি সেখানে পা রাখেন, তাহলে আপনি অবশ্যই ভেঙেচুরে যাবেন। সেখানে আপনার ওজন বেড়ে হবে প্রায় কয়েক ট্রিলিয়ন।
সুপারনোভার আগে নিউট্রন স্টারের স্পিন কম থাকে। কিন্তু সুপারনোভার পর এর স্পিন অনেক বেড়ে যায়। কেন
কেন?
– সুপারনোভার আগে নিউট্রন স্টারটির ভর অনেক বেশি থাকে। কিন্তু সুপারনোভা বিষ্ফোরণের পর সংকুচিত হতে হতে এর ভর কমে যায়। কিন্তু আমরা কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণশীলতার নীতি অনুসারে জানি, “কোনো বস্তুর ওপর টর্কের লব্ধি শূন্য হলে বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে।”
যেহেতু ভর কমে গিয়েছে তাই সংরক্ষণশীলতা ধরে রাখার জন্য এর স্পিন অনেক বেড়ে যায়।
এটিকে আইস স্কেটারদের স্পিনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যখন তারা হাত ২টি ছড়িয়ে রাখে, তখন তাদের জড়তার ভ্রামক বেশি হয়। কিন্তু যখনই হাত দুটিকে কাছে এনে ফেলে, তখন জড়তার ভ্রামক কমে যায়। ফলে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণশীলতার নীতি অনুসারে ভরবেগ একই রাখতে এদের কৌণিক ঘূর্ণনবেগ বেড়ে যায়, তথা স্পিন বেড়ে যায়।

ছবি: NASA/JPL-Caltech/McGill
সুপারনোভার যেখানে আগে সপ্তাহে একবারের মতো স্পিন করত। কিন্তু সংকুচিত হতে হতে এর ব্যাস ২০ কিলোমিটার হয়ে যাওয়ায় এর স্পিন অনেক বেড়ে যায়। এর স্পিন সর্বোচ্চ সেকেন্ডে ৭১৬ বার হতে পারে। এর পাশাপাশি এর ম্যাগনেটিক ফিল্ডও শক্তিশালী হয়ে যায়। এর ম্যাগনেটিক ফিল্ড পৃথিবীর চেয়ে ১০০ মিলিয়ন থেকে ১ কোয়াড্রিলিয়ন শক্তিশালী।
এখন আপনার মনে একটি প্রশ্ন জাগার কথা যে নিউট্রন স্টারের ম্যাগনেটিক ফিল্ড থাকবে কেন? এখানে তো কোনো চার্জিত কণা নেই, পুরোটাই তো চার্যবিহীন কণা নিউট্রন দিয়ে তৈরি।
আসলে নিউট্রন স্টার পুরোটাই নিউট্রন দিয়ে তৈরি নয়। এর মধ্যে প্রায় ১০% ইলেকট্রন এবং ১০% প্রোটন থাকে। এই চার্জিত কণাগুলো, নিউট্রন স্টারের স্পিনের ফলে চলমান হয়, যার ফলে ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সৃষ্টি হয়।
নিউট্রন স্টারকে কীভাবে পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়?
১৯৬৭ সালে যোসেলিন বেল রেডিয়ো টেলিস্কোপ বানানোর কাজ করছিল। সে তাদের সংগৃহীত ডেটার মধ্যে ক্রমাগত একটা শব্দ শুনতে পারছিল। ডেটার মধ্যে সমস্যা থাকায় এরকম শব্দ হচ্ছিল, না কি অন্য কিছুর কারণে তা হচ্ছিল, জানার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। পরিশেষে তিনি জানতে পারলেন, এই শব্দটি ডেটার সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয়নি; এই শব্দটি মহাজাগতিক কোনো বস্তু থেকে এসেছে। এই বস্তুটি হলো পালসার।
পালসার কী?
নিউট্রন স্টারই হচ্ছে পালসার। নিউট্রন স্টার যখন তার ম্যাগনেটিক ফিল্ড-সহ খুব দ্রুত ঘুরতে থাকে, তখন ম্যাগনেটিক ফিল্ডের দুই পোল থেকে লাইট বিমের বিকিরণ ঘটে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন হিসেবে।
নিউট্রন স্টারের অক্ষ এবং দুই ম্যাগনেটিক পোল একই সরলরেখায় থাকে না বলে দ্রুত ঘোরে এবং লাইট বিম বিকিরণের ফলে নিউট্রন স্টারকে লাইটহাউজের মতো পৃথিবী থেকে ঝিকিমিকি করতে দেখা যায়। একেই পালসার বলে। যোসেলিন বেলই সর্বপ্রথম পালসার ডিটেক্ট করে। এই পালস গামা-রে টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখা যায়।

ছবি: NRAO
আরেক ধরনের নিউট্রন স্টার রয়েছে। এদের ম্যাগনেটিক ফিল্ড সাধারণ নিউট্রন স্টারের চেয়ে ১,০০০ গুণ বেশি। এ ধরনের নিউট্রন তারাকে ম্যাগনেটার বলা হয়। ম্যাগনেটারদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ম্যাগনেটিক অবজেক্ট বলা হয়। এদের ম্যাগনেটিক ফিল্ড কেন এত শক্তিশালী, তা এখনো পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।
শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড বিশিষ্ট নিউট্রন স্টার বা ম্যাগনেটারের ক্রাস্টের (ভূ-ত্বক) পুরুত্ব খুবই কম এবং এটি খুবই শক্ত। নিউট্রন স্টারে ম্যাগনেটিক ফিল্ড আর ক্রাস্ট (ভূত্বক) পরস্পরের সাথে লেগে থাকে। তাই এ দুইটার মধ্যে সামান্য পরিবর্তন এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে পারে। ক্রাস্ট, গ্র্যাভিটি আর ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ঘোরার জন্য খুব জোরে একটা টান অনুভব করে। যদি এই ক্রাস্টের সামান্য বিচ্যুতি ঘটে তাহলে এটা একটা ভূমিকম্প এর মতো তারকা-ভূমিকম্প সৃষ্টি করবে, যা ভূমিকম্পে চেয়ে অধিক শক্তিশালী। কারণ এর ক্রাস্ট (ভু-ত্বক) খুবই ঘনত্বপূর্ণ এবং মাধ্যাকর্ষণও অনেক বেশি। তাই যদি মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার ক্রাস্ট এদিক-ওদিক হয়, তাহলে এত বিশাল পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হবে যা সূর্যের ১,৫০,০০০ বছরে নির্গত শক্তির চেয়েও বেশি।
নিউট্রন তারার শেষ পরিণতি কী?
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন করতে করতে নিউট্রন তারার স্পিন বা ঘর্ণয়ন ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে কমে যেতে থাকে। একসময় ডেডলাইন এসে পড়ে। ডেডলাইন বলতে সেই সীমাকে বোঝায়, যখন আর পালসার দেখা যায় না। পালসার দেখা না গেলে তখন নিউট্রন তারা সম্পর্কে আর জানা যায় না। তবে সময়ের সাথে সাথে বিকিরণ করতে করতে নিউট্রন তারা ঠান্ডা হতে থাকে। এটাই এখন পর্যন্ত জানা নিউট্রন তারার শেষ পরিণতি।
নিউট্রন স্টারকে কতক্ষণ পালসার হিসাবে শনাক্ত করা যায়, তা সাম্প্রতিক ক্যাটালগ দেখলে জানা যায়। সবচেয়ে বয়স্ক পালসার ১০,০০০,০০০,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ পালসারগুলির বয়স ১০০,০০০ থেকে ৩০০,০০০,০০০ বছরের মধ্যে।
বাইনারি নিউট্রন স্টারের পরিণতি
বাইনারি নিউট্রন স্টারও দেখা যায় মহাবিশ্বে। দুইটি নিউট্রন স্টার নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড বেগে ঘুরতে থাকে। এভাবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে শক্তি বিকিরণ করে তারা স্পেইস-টাইমকে তরঙ্গায়িত করে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি করে। ফলে আস্তে আস্তে তাদের কক্ষপথ ক্ষয় হতে হতে ছোটো হয়ে আসে এবং শেষ পর্যন্ত পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং একটি বড়ো বিস্ফোরণ ঘটে। এভাবে যে বিস্ফোরণটি হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে কিলোনোভা।

ছবি: ESO/University of Warwick/Mark Garlick
২০১৫ সালে Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory (LIGO) বা লাইগো অবজারভেটরিতে প্রথম মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল দুইটি নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের কারণে।
কিলোনাভার সময়ে পদার্থের অবস্থা এতটাই চরম হয় যে তারা আরো ভারী পরমাণু তৈরি করতে পারে। এটা নক্ষত্রের ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয় না, বরং বিপুল পরিমাণ নিউট্রনে ভরা পদার্থ ছিটকে যেতে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে পুনর্বিন্যস্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ইউরেনিয়াম, প্লাটিনাম, সোনা ইত্যাদির মতো মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ভারী পরমাণুগুলোর সৃষ্টি হয়।
সুপারনোভা ও কিলোনোভার পর ছিটকে বের হওয়া পরমাণুগুলো অনেক মিলিয়ন বছর ধরে গ্যালাক্সির মধ্যে ভেসে বেড়ায়। এদের মধ্যে কেউ হয়তো ধীরে ধীরে মেঘের মতো একটা আস্তরণ তৈরি করে, যেটি মহাকর্ষের প্রভাবে নিজেদের মধ্যে একত্রিত হয়ে নতুন কোনো নক্ষত্রের জন্ম দেয়। এর আশেপাশে হয়তো অনেকগুলো গ্রহ তৈরি হয়ে সে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। আমাদের সৌরজগৎ এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন।
আমাদের চারপাশে যে জটিল মৌলগুলো দেখা যায়, তার সবই হয়তো অতীতে কোনো নক্ষত্রের মৃত্যুর সময়ে তৈরি হয়েছিল।
ভাবতেই অবাক লাগে যে আমাদের দেহের জটিল জটিল পরমাণুগুলো তৈরি হয়েছে সেই নক্ষত্রের অভ্যন্তরে! এজন্যই বলা হয়ে থাকে আমরা নক্ষত্রের সন্তান।
একদিন আমি আমার মাকে বলেছিলাম, “আমি নক্ষত্রের সন্তান।”
মা বলেছিল, “নক্ষত্র তো তোরে গর্ভধারণ করছিল, তাই না?”
তথ্যসূত্র:
১. Neutron star – Wikipedia
২. PSR J1748−2446ad – Wikipedia
৪. Magnetars – NASA
৫. What is the origin of the magnetic field of a neutron star? – researchgate.net
৬. Biggest Starquake – space.com
৭. Neutron star – NASA
যেসকল ভিডিয়ো থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে:
১. https://youtu.be/udFxKZRyQt4
২. https://youtu.be/fFeV8WxIZLk
৩. https://youtu.be/RrMvUL8HFlM
উত্তর দিন