আমরা অনেকে জানি যে, নক্ষত্রের মাঝে প্রতিনিয়ত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া চলতে থাকে। এই বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম, লিথিয়াম, অক্সিজেন, কার্বন এভাবে ক্রমেই ভারী ধাতু গঠনের দিকে অগ্রসর হয়। নক্ষত্রের তাপমাত্রা যখন ২০-৩০ লক্ষ কেলভিন হয়, তখন নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। হাইড্রোজেন ভেঙে প্রোটন আর ইলেকট্রনের স্যুপ তৈরি হয়৷ এটা পদার্থের প্লাজমা অবস্থা।
প্রোটন আর ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রন ও নিউট্রিনো সৃষ্টি হয়৷
p + e⁻ —————> n + v
অতঃপর দুটি প্রোটন আর দুটি ইলেকট্রন মিলে গঠিত হয় হিলিয়াম৷ এই হিলিয়াম পরমাণুর ভর হাইড্রোজেনের চেয়ে কম হয়। বাকি ভরটুকু তাপ ও আলোক শক্তি হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
নক্ষত্রের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে কেন্দ্রমুখী চাপ আর নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার কারণে কেন্দ্রবিমুখী চাপ সৃষ্টি হয়। এই ভারসাম্য রক্ষা করলে নক্ষত্র সাম্যাবস্থায় আসে। এরা প্রধান ধারার তারা (main sequence star)। কিন্তু একসময় নক্ষত্রের কেন্দ্রের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে যায়, তৈরি করে হিলিয়াম। তখন নিউক্লিয়ার ফিউশন চাপের চেয়ে কেন্দ্রমুখী মাধ্যাকর্ষণ চাপ বৃদ্ধি পায় , কেন্দ্র ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যায় এবং তাপ ও চাপ বৃদ্ধির ফলে হিলিয়াম থেকে তৈরি হয় কার্বন ও অক্সিজেন। একে হিলিয়াম ফ্ল্যাশ বলে৷ তখন ব্যাপক কেন্দ্রবিমুখী চাপ সৃষ্টি হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে আটকে রাখে সংকুচিত না হতে৷ এই ধারাবাহিক মৌল তৈরির ক্রিয়া একসময় বন্ধ হয়ে যায়, যখন ভারী মৌল (লোহা, কোবাল্ট) তৈরি হয়।
নক্ষত্রের কেন্দ্র তখন প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে সংকুচিত হতে শুরু করে, আর বাহিরের লেয়ারে থাকা হাইড্রোজেন ঠান্ডা ও সম্প্রসারিত হয়৷ তখন তা লাল দেখায়। একে ‘লাল দানব’ বলে। আমাদের সূর্যও ৭০০ কোটি বছর পর এরকম লাল দানব তারায় (red giant star) পরিণত হবে।
১টি মন্তব্য