পিঁপড়ারা কি সত্যিই ঘুমায় না?

প্রচলিত একটি গুজব আছে যে পিঁপড়ারা এত পরিশ্রমী যে তারা ঘুমায় না। কিন্তু আসলেই কি পিঁপড়ারা ঘুমায় না? চলুন তাহলে জেনে আসি আসল সত্যটি।

হ্যাঁ, পিঁপড়া ঘুমায়। কিন্তু তাদের ঘুম আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। ঘুম মেরুদণ্ডী প্রাণীদের, বিশেষত পাখি এবং স্তন্যপায়ীদের একটি জৈবিক অবস্থা, যা আমরা সচরাচর লক্ষ করলে বুঝতে পারি। কিন্তু একাকী বা দলবদ্ধ অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের ঘুমের ব্যাপারে খুব কমই জানা যায়। এজন্য মানুষের মাঝে বিষয়টা নিয়ে ধারণা না থাকায় বিভিন্ন গুজব প্রচলিত আছে। পিঁপড়া তেমনই একটি প্রাণী যারা কখনও ঘুমায় না বলে বিভিন্ন ফ্যাক্ট প্রচলিত আছে। পিঁপড়ারা যদি ঘুমিয়ে থাকে, তবে তাদের ঘুম কেমন?

বেশিরভাগ পিঁপড়াই কাজ করে (মূলত শ্রমিক শ্রেণি) এবং দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারে না। একটি ছোট্ট সংখ্যক পিঁপড়া, যারা অন্য পিঁপড়াদের শাসন করে, (মূলত রানি পিঁপড়া) তারা ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর মতো বিলাসিতা করে।

পিঁপড়ারা কিন্তু মানুষদের মতোই সামাজিক প্রাণী, যেখানে সবাই পরিশ্রমী এবং প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করে যা তাদের ঘুমের সময়কে কমিয়ে আনে। মানুষদের মতোই পিঁপড়াদের কম ঘুমের জন্য তাদের আয়ু কমে যায় এবং তারা মাত্র ৩ বছর বেঁচে থাকে। যেখানে নিয়মিত ঘুমানোর জন্য রানি পিঁপড়াদের জীবনকাল দীর্ঘ হয়, তারা প্রায় ৩০ বছরের দীর্ঘ জীবন পায়।

পিঁপড়াদের ঘুমের ধরন মানুষের থেকে অনেক আলাদা। তারা কোনো সময়সূচি ফলো করে না। কর্মী পিঁপড়ারা দিনে প্রায় ২৫০ বার ঘুমিয়ে থাকে, যার কোনোটিই এক মিনিটের অধিক স্থায়ী হয় না। যেখানে রানি পিঁপড়া দিনে ৯০ বারের বেশি ঘুমিয়ে থাকে, যার কোনোটা ৬ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। কর্মী পিঁপড়ারা অনুর্বর হয় এবং তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য শুধু রানি পিঁপড়ার সেবা করা। তারা যখন ঘুমিয়ে থাকে না, তখন পাহাড়ায় বা কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে। অন্য দিকে পুরুষ পিঁপড়ারা রানি পিঁপড়ার সাথে প্রজননে থাকে, কর্মী পিঁপড়াদের এখানে কোনো কাজ নেই।

পিঁপড়ারা মূলত ফেরোমন (Trail pheromone)-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে যা তাদের অ্যান্টেনা ধরতে পারে। এর মাধ্যমে পিঁপড়ারা একাকী বা দলবদ্ধভাবে নিজেদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

একটি পিঁপড়ার ঢিবিতে কমপক্ষে ৮০% কর্মী পিঁপড়া জেগে থাকে ও সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করে; যেন যখনি প্রয়োজন হয়, তখনি নিজেদের প্রস্তুত রাখতে পারে এবং পিঁপড়াদের বাসস্থানগুলো নিয়মিত নজরদারিতে আছে কি না নিশ্চিত করে। এতে আলো-অন্ধকার কাজের বাধা হয় না। একটি পিঁপড়া যে ঘুমাচ্ছে, তার লক্ষণ হলো এদের দেখতে মৃত মনে হবে এবং অ্যান্টেনাগুলো নড়বে না। আর রানি পিঁপড়াদের ঘুম ও জাগার প্যাটার্ন সুসংগঠিত হওয়ায় তাদের ঘুম দীর্ঘ হয় (মুখ খোলা থাকে, অ্যান্টেনাগুলোও মাঝ পর্যায়ে থাকে) এবং তারা সম্ভবত স্বপ্নও দেখে! (REM বা Rapid eye movement ঘুমের ফেইজ রানি পিঁপড়াতে লক্ষণীয়, কারণ মানুষের REM ফেইজে চোখের মুভমেন্টের মতো পিঁপড়াদের অ্যান্টেনা নড়াচড়া করে থাকে!)

 

তথ্যসুত্র: