টিভি চ্যানেলে আমরা প্রায়ই দেখি যে, ষাঁড়ে-মানুষে লড়াই উৎসব হচ্ছে।
ম্যাটাডরের হাতে লাল কাপড় বা টুপি দেখেই ষাঁড় ক্ষিপ্রগতিতে তেড়ে আসে; আমরা অনেকেই এমন জেনে এসেছি। ভাবি, লাল রং ষাঁড়ের রক্তেও আগুন ধরিয়ে দেয়। এখানেও আমরা নিজেদের মতো করে অর্থ আরোপ করেছি। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, আসলে রং নয়, বস্তুর নড়াচড়া ষাঁড়কে এমন উন্মত্ত করে, ক্ষিপ্রতা দেয়।
২০০৭ সালে ডিসকভারি চ্যানেলের ‘মিথবাস্টার্স’ অনুষ্ঠান থেকে এমনই এক লড়াইয়ের গবেষণা চালানো হয়।
ষাঁড়ের রেগে ছোটার কারণ কী? যোদ্ধার লাল কাপড় না কি রং?
এই প্রশ্নের উত্তর তিনভাবে নির্ণয়ের. চেষ্টা করা হয়:
১।
প্রথম নিরীক্ষায় বসানো হয় তিনটি পতাকা—লাল, নীল, সাদা। কিন্তু ষাঁড় তিনটি রঙের দিকেই ছুটে যায়।
২।
দ্বিতীয় নিরীক্ষায় রিংয়ে তিনজন নকল প্রতিপক্ষ দাঁড় করানো হয় লাল, নীল ও সাদা পোশাকে। এবারও ষাঁড় তিনটিকেই আক্রমণ করে রং নির্বিশেষে। শুধু তা-ই নয়, লাল আক্রান্ত হয়েছিল সবার শেষে।
৩।
সবশেষে একজন জীবন্ত ব্যক্তিকে লাল জামা পরিয়ে রিংয়ে পাঠানো হয়। তাঁকে বলা হয়, স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে। একই সময়ে দুজন কাউবয়কে, যাদের কারোরই লাল জামা ছিল না, বলা হয় রিং ঘিরে ঘুরতে।
ষাঁড় আপাদমস্তক লাল জামার অনড় লোকটিকে এড়িয়ে চলমান দুই কাউবয়কে আঘাত করতে ছুটে যায়।
ষাঁড় যদি লাল রং না-ই চেনে, তবে কেন তার প্রতিপক্ষ লাল কাপড় হাতে উস্কানি দেয়?
আসলে, ষাঁড়ের লড়াইয়ের শেষ ভাগে এই পর্বটি থাকে। এই পর্বে ষাঁড়ের ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়। লাল [কাপড়ের মাধ্যমে] এই নৃশংস দৃশ্য আড়াল করারই চেষ্টা থাকে। আর এটা জাস্ট একটা মিথের ওপর বিশ্বাস রেখে লাল জামা দিয়ে উস্কানি দেওয়া হয়।
আসলে আমরা এসব দেখে দেখে এমনভাবেই মস্তিষ্কের ছাঁচ তৈরি করেছি, যার কারণে অবচেতন মন বলে, মানুষের মতো আর সবাই সাত রঙেই রামধনু দেখে। আমাদের প্রবণতাই হচ্ছে সবাইকে নিজের মতো করে বোঝা। অন্যের চোখে দেখার মতো এমপ্যাথি তথা সহানুভূতি কয়জনের থাকে!
মানবকুলে কেউ কেউ বর্ণচোরা হয়, তবে এ অসুখ দুর্লভ। উলটোটা চলে প্রাণিজগতে।
তাদের জগৎটা আমাদের মতো নয়। আমরা পৃথিবীটাকে যতটা রঙিন দেখি, সেটা অতটা রঙিন নয় ওদের কাছে। আবার কোনো পোকা, প্রাণীর কাছে আমাদের চেয়েও বেশি রঙিন। কোনো বস্তুতে আলো পড়ে তা প্রতিফলিত হয় নানা তরঙ্গে। সেই তরঙ্গ আমাদের চোখের ‘কোন’ নামক সেল বা কোষে এসে পড়ে। তারপর তাতে থাকা রঙের অনুভূতি দেখারূতি সৃষ্টিকারী রিসেপ্টরগুলো (রড, কোন) আমাদের মস্তিষ্কে রঙের প্রকৃতি এবং রঙের উজ্জ্বলতা অনুভব করায়।
নানা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোককে আমরা আলাদা আলাদা রং হিসাবে অনুভব করে থাকি৷
কুকুর, বিড়ালদের চোখে থাকে দুই ধরনের কোন কোষ৷ এই দুই ধরনের কোন কোষ দিয়ে তারা শুধুই হলুদ আর নীল রং এবং এদের সমন্বয়ে তৈরিকৃত রংগুলো বুঝতে পারে৷
সুতরাং, টমকোনো কুকুরই এ রংগুলো ছাড়া বাকি রংগুলো বোঝে না৷ এগুলো ছাড়া সবকিছুই তাদের কাছে ধূসর বর্ণ৷ খোলা মাঠে ওদের একটা বল ছুঁড়ে দিলে, ওরা বলের রং দেখে ওটার পেছনে ছোটে না। ওরা আসলে সবুজ ঘাসের মধ্যে গড়িয়ে যাওয়া একটা বল দেখতে পায় মাত্র৷ তাই দেখে ওরা ওটার পেছনে ছোটে।
ঠিক তেমনটাই ষাঁড়ের ক্ষেত্রেও৷ লাল রং তার চোখে আমাদের মতো লাল রং হয়ে ধরা দেয়নি। লালের বদলে অন্য কোনো রঙের জিনিস চোখের সামনে নড়াচড়া করলেও সে কিন্তু তাড়া করবে৷
কুকুর, বিড়াল, ষাঁড়ের গল্প তো বললাম৷ এমন কিছু সরীসৃপ, উভচর, মাছ, পাখি আর পতঙ্গ রয়েছে যাদের চোখে আছে চার ধরনের কোন কোষ। আছে ফলে এরা মানুষের চেয়েও বেশি রং দেখতে পায়৷ মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীদের চোখে তিন ধরনের কোন কোষ কোষ তৈরি হয়েছে৷ ফলে মানুষের মতো তারাও একাধিক রং দেখতে পায়৷ কপাল খারাপ বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, গোরুদের৷ মাত্র [দু]ই ধরনের কোন নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে৷ তাদের কাছে দুনিয়াটা শুধুই হলুদ, নীল আর ধূসর বা সাদা বা আর কিছু যৌগিক রঙের৷
ষাঁড় সবুজ, নীল, বেগুনী ও এদের সমন্বয়ে তৈরি আরও কিছু কালার বুঝতে পারে, কিন্তু লাল কালার বুঝতে পারে না।
তথ্যসুত্র:
https://www.livescience.com/amp/33700-bulls-charge-red.html
https://www.scienceabc.com/nature/animals/do-bulls-really-hate-red-colour-blind.html
https://www.kalerkantho.com/print-edition/oboshore/2016/03/12/334843
https://www.colour-blindness.com/general/myths/
https://wtamu.edu/~cbaird/sq/mobile/2012/12/12/what-is-it-about-red-that-makes-bulls-so-angry/
https://www.scienceabc.com/nature/animals/do-bulls-really-hate-red-colour-blind.html
উত্তর দিন