মাধ্যমিক বিজ্ঞান বইয়ের Tongue ম্যাপ টেস্ট বাড ও টেস্ট রিসেপ্টরের উপস্থিতির ভিত্তিতে জিহ্বাকে মোট ৩ থেকে ৪টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে।
তথ্যটা কোথাও কোথাও কিছুটা এভাবে রটেছে: “জিহ্বার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের taste bud বা স্বাদ কোরক/কুঁড়ি থাকে। যেমন: জিহ্বার সামনের অংশে মিষ্টি, শেষের অংশে টক এবং দুই পাশে যথাক্রমে নোনতা ও তিক্ত/তিতা স্বাদের টেস্ট বাড ও রিসেপ্টর থাকে।”
আবার কোথাও বলা আছে, “জিহ্বার সামনের অংশে মিষ্টি/নোনতা, দুই পাশে টক, পেছনের অংশে তিতা স্বাদ কোরক থাকে। মাঝখানে স্বাদ কোরক না থাকায় আমরা জিহ্বার মাঝখানটায় কোনো বিশেষ স্বাদ পাই না।”

ছবি: বিজ্ঞান – ষষ্ঠ শ্রেণী | জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) | ২০২১ | পৃষ্ঠা: ৪৬
এ তথ্যটা ভুল। এটা প্রায় শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত একটা মিথ। প্রকৃতপক্ষে জিহ্বার বিভিন্ন অংশ
(জিহ্বার সামনের/পেছনের/দুই পার্শ্ব) একইসাথে বিভিন্ন রকম স্বাদ সনাক্ত করতে পারে; জিহ্বার কোনো নির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট কোনো স্বাদ সনাক্ত করে এমন নয়।
তাছাড়া বলা হয়েছে জিহ্বার মাঝের অংশে কোনো টেস্ট বাড বা স্বাদ কোরক নেই যা আরেকটি ভুয়া কথা। জিহ্বার সমস্ত অংশেই টেস্ট বাড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাছাড়া কেবল জিহ্বা নয়, জিহ্বার ওপরের দিকে কোমল তালুতে এবং গলার দিকেও টেস্ট বাড পাওয়া যায়।
জিহ্বার প্রতিটি অংশেই বিভিন্ন ধরনের স্বাদ কুঁড়ি বা টেস্ট বাড মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। মানুষ জিহ্বার সব অংশই সকল রকম স্বাদ নিতে পারে। তবে টেস্ট বাডের উপস্থিতি জিহ্বার এক অংশের চেয়ে আরেক অংশে কম-বেশি হতে পারে এবং একই টেস্ট বাড জিহ্বার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পরিমাণে থাকতে পারে, সেই কারণে স্বাদেরও তারতম্য ঘটতে পারে। বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্নভাবে টেস্ট বাডসমূহের ক্রিয়া, ঘনত্বের মাঝে পার্থক্য থাকতেই পারে।
যেমন : মিষ্টি স্বাদের প্রতি সেন্সিটিভিটির ক্ষেত্রে মেয়ে ও ছেলের মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু মহিলারা জিহ্বার অগ্রে টক স্বাদের প্রতি ছেলেদের চেয়ে একটু বেশি সেন্সিটিভ।
আমাদের পুরো জিহ্বাতে প্রায় ৮ হাজারটি টেস্ট বাড আছে যেগুলো বিভিন্ন প্রকার টেস্ট গ্রহণে সক্ষম। বিভিন্ন টাইপ টেস্ট রিসেপ্টর কোষে মিশ্রিত অবস্থায় অবস্থান করছে।

ছবি: OpenStax Anatomy and Physiology (Version 8.25)/OpenStax
অর্থাৎ, জিহ্বার নির্দিষ্ট কোনো অংশে কোনো নির্দিষ্ট টেস্ট বাড ও টেস্ট রিসেপ্টর অবস্থান করে না; বরং পুরো জিহ্বাতেই বিভিন্ন প্রকার টেস্ট বাড এবং তাতে থাকা বিভিন্ন প্রকার টেস্ট রিসেপ্টরগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে, মিশ্রিত অবস্থায় অবস্থান করে। তার মানে জিহ্বার নির্দিষ্ট কোনো অংশ কোনো নির্দিষ্ট টাইপ স্বাদ গ্রহণ করে না; বরং জিহ্বার সকল অংশই সকল প্রকারের স্বাদ গ্রহণে সক্ষম।
তাছাড়া ভুয়া তথ্যমতে, জিহ্বার সামনে বাম পাশে নোনতা স্বাদ পাওয়ার কথা, কিন্তু আপনি যদি জিহ্বার পেছন দিকে বা জিহ্বার যে-কোনো সাইডেই লবণ রেখে দেখেন তাহলে খেয়াল করে থাকবেন যে সব সাইডেই নোনতা স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে।
তাছাড়া আপনি আপনার জিহ্বার পেছন দিকে একটু চিনি রেখে দেখেন, সেখানেও মিষ্টি স্বাদ পাবেন; ওসব ভুয়া তথ্যমতে সেখানে আপনার কোনো মিষ্ট স্বাদ পাওয়ারই কথা না। (এখনই লবণ জিহ্বার বিভিন্ন অংশে রেখে কথাটার সত্যতা যাচাই করে নিন।)
তথ্যসূত্র:
- Sato K, Endo S, Tomita H. Sensitivity of three loci on the tongue and soft palate to four basic tastes in smokers and non-smokers. Acta Otolaryngol Suppl. 2002;(546):74-82.
doi: 10.1080/00016480260046445. PMID: 12132625. - Steven D. Munger, That neat and tidy map of tastes on the tongue you learned in school is all wrong, The Conversation, July 7, 2015
- Chandrashekar, J., Kuhn, C., Oka, Y. et al. The cells and peripheral representation of sodium taste in mice. Nature 464, 297–301 (2010).
doi: 10.1038/nature08783 - Linda M.Bartoshuk, The biological basis of food perception and acceptance. Food Quality and Preference, Volume 4, Issues 1–2, 1993, Pages 21-32.
doi: 10.1016/0950-3293(93)90310-3 - Barretto, R., Gillis-Smith, S., Chandrashekar, J. et al. The neural representation of taste quality at the periphery. Nature 517, 373–376 (2015).
doi: 10.1038/nature13873 - Huang, A., Chen, X., Hoon, M. et al. The cells and logic for mammalian sour taste detection. Nature 442, 934–938 (2006).
doi: 10.1038/nature05084 - Christopher Wanjek, The Tongue Map: Tasteless Myth Debunked, Live Science, August 29, 2006
উত্তর দিন